ঢাকা ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম...

ছোটগল্প বিয়েপাগলি

অনিক দে
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

লেখক: শরীফা সুলতানা

নিতুর গায়েহলুদে কোন শাড়িটা পড়ব বাছাই করছিলাম। তখনি নিতুর ফোন।
হ্যালো, জয়া। কাঁদো কাঁদো কন্ঠ নিতুর। আমি ভড়কে গেলাম। আজ বাদে যার গায়েহলুদ সে থাকবে প্রফুল্ল। হাসিখুশি।
মা- খালাদের কাছে শুনেছি বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়েদের উৎফুল্ল থাকতে হয়। হাতে সারাক্ষণ শোভা পাবে খাবারের বাটি নয়ত রুপচর্চা জাতীয় কিছু। বাবার বাড়ি ছেড়ে যাবার দুঃখটা ওর মনে জাকিয়ে বসেছে!
কথা বলছিস না যে?
নিতুর প্রশ্নে বললাম, “বল”
আবারও রিপিট হয়েছে। নিতুর ফুটপাথে বুঝে গেলাম সব।
“কাঁদিস না, আমি আসছি।”
“না কেঁদে আর কি করব বল?” বার বার যার বিয়ে ভাঙে–
ওর ফুঁপিয়ে কান্না আমাকে অস্থির করে তোলে।
আমার চুপ থাকা দেখে ও আবার শুরু করে,
” যার বিয়ে ভাঙে সে বুঝে এর জ্বালা। তোর তো আর বিয়ে ভাঙেনি”
” তা ভাঙেনি, মনতো ভেঙেছে”
কথার পিঠে কথা লাগালাম।
“বিয়ে ভাঙা আর মন ভাঙা এক জিনিস না” ও ফুঁপিয়েই যাচ্ছে।
দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখে মনে মনে বললাম,” একটা মানুষ দেখে, অন্যটা দেখেনা”।
নিতুকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দিলাম।

নিতুর জন্য সত্যিই খারাপ লাগছে আমার। এ নিয়ে পাঁচবার বিয়ে ভেঙেছে ওর। ওকেও বলিহারি। ন্যাড়া কবার বেলতলায় যায়! অবশ্য ওর দোষ দিয়ে লাভ নাই। সবারই নিজস্ব একটা ভুবন থাকে। সেই ভুবন সে তার ইচ্ছেমাফিক সাজায়। নিতুর সংসার করার খুব শখ। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও ও বলত,” আমি চুটিয়ে সংসার করব। ছেলেপুলে মানুষ করব।”
বন্ধুরা মুখ টিপে হাসতাম। আড়ালে ওর নাম দিয়েছিলাম বিয়েপাগলী।

হাত ইশারায় রিক্সা ডাকলাম।
” কই যাইবেন” ?
“কাচিঝুলি মোড়”
নিতুর বাসাটা মোড় থেকে একটু ভিতরে। একটু আগে নেমে ওর জন্য কিছু একটা কিনতে হবে। উপহার ফেলে মানুষের মন ভালো হয়।

“আরে জয়া তুমি?”
পিছন না ফিরেও বুঝে নিতে কষ্ট হয় না এটা আরিফ ভাইয়ের কন্ঠ। নিতুর কাজিন। যাকে দেখলে আমার ভিতরটা ওলট পালট হয়ে যায়। কিন্ত আরিফ ভাই এর ভিতরটা জানি না। উনাকে দেখে কিছু বুঝার উপায় নেই।
সবসময়ই শান্ত দীঘি। এখনও শান্ত। অথচ তার কাজিনের বিয়ে ভেঙে গেছে। আশ্চর্য!
‘কি ভাবছ?”
চোখের সামনে দুই আঙুলের তুড়ি মারতে মারতে বলে
“কিছুনা। নিতুর কাছে আসলাম”
নিজেকে আলগোছে সামলে নেই।
“সেতো আসবেই। প্রিয় বন্ধু বলে কথা”
আরিফ ভাই হাসি প্রসারিত করে বলে।
“আপনার মন খারাপ হচ্ছে না?”
মাথা নিচু করে বলি
তখন হৃদয় তোলপাড় করা হাসি দিয়ে আরিফ ভাই বলে,” না, চলো তোমাকে মিষ্টি খাওয়াই”।
“কি?”
আমি অবাক না হয়ে পারি না।
“তোমার সাথে একটু কথা আছে। অনেকদিন ধরে বলার চেষ্টা করছি কিন্ত পারছিনা”
একরাশ লজ্জার বাতাস আমার চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেয়। কি বলবে? যা শোনার জন্য আমি অষ্টপ্রহর অপেক্ষায় থেকেছি।

মানুষ সত্যিই স্বার্থপর। আমিও তার প্রমাণ দিলাম। নিতুর কথা ভুলে আরিফ ভাইকে অনুসরণ করলাম।
“বলুন” কানের কাছে চুল গুজে দিতে দিতে বললাম।
“তোমার মাথা খারাপ। রাস্তাঘাটে”
তখনি নিতুর ফোন। কিন্ত রিসিভ করতে মন চাইছে না।
“রিসিভ করে বলো এক ঘন্টা পর আসছ”
আরিফ ভাইয়ের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পালন করি।

হাঁটতে হাঁটতে ব্রহ্মপুত্র ভ্যালির সামনে আমরা। চলতে গিয়ে কতবার যে আরিফ ভাইয়ের গা ঘেঁষাতে অস্থির হয়েছি!
“কফি খাবে”
মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই। ও প্রিয়তম আমার তোমার জন্য বিষও খেতে পারি। আর এতো কফি। কবিতার লাইন মনে পড়লেও কার লেখা মনে পড়ছেনা। অবশ্য আরিফ ভাইয়ের কারণে আমার সব গোবলেট হয়ে যায়।
আরিফ ভাই কফির জন্য ওয়েটারকে তাড়া দিতে ব্যস্ত। আর আমি ভিতরে তোলপাড় নিয়ে ঘামছি। কখন শুনব সেই প্রিয় উক্তি-
“এই ছেলে, এদিকে”
আরিফ ভাইয়ের ডাকে দশ বারো বছর বয়সী ছেলেটা বকুল ফুলের মালা নিয়ে এগিয়ে আসছে।
বকুল ফুল আমার খুব প্রিয়। নিশ্চয়ই নিতু বলেছে। এতো পাকামি ওকে কে করতে বলেছে!
লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসছে আমার। ছেলেরা শুধু শুধুই মেয়েদের লজ্জিত দেখতে পছন্দ করে।

“হাত পাতো ”
ভিতরে চরম থরথর কাঁপুনি নিয়ে হাত পাতলাম।
মালা দুটি হাতে দিয়ে আরিফ ভাই বললেন,
“একটা উপকার করবে? তুমি ছাড়া কেউ পারবে না”
যতোটুকু উৎলানো ছিলাম ততোটুকু মিইয়ে গেলাম। কোনোরকম ঢোক গিলে বললাম
“কি উপকার?”
আমাকে অবাক করে দিয়ে আরিফ ভাই বললেন,
“আসলে নিতুর বিয়ে আমিই ভেঙে দিই”
গলা দিয়ে স্বর বের হলোনা আমার। আস্তে করে নতমুখে জানতে চাইলাম
“কেন?”
“একটি ছেলে একটি মেয়ের বিয়ে কেন ভেঙে দেয় বূঝনা।
বয়সতো কম না”
সেই পাগল করা হাসি দিয়ে, আমারে পাগল করতে করতে আরিফ ভাই বলেই যাচ্ছে–
“নিতুকে আমি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি। অনেকবার বলতে চেয়েও পারিনি। এবার যদি দ্বায়িত্বটা তুমি নাও”
মনে মনে বললাম,” অবশ্যই নিব। এই প্রথম তুমি আমার কাছে কিছু চাইলে”
নিজেকে ধাতস্থ করতে পারলেও চোখ বেঈমানি করল।
“তুমি কাঁদছ কেন”
আরিফ ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে বললাম,
” খুশিতে আরিফ ভাই। বিয়েপাগলি বন্ধুটি এবার ঘর পাবে।সেই খুশিতে কাঁদছি।”
“ও তাই বলো”

“”একটা মালা তোমার, একটা নিতুর “।
“আচ্ছা। ”
নিতুর মালাটা পার্সে ঢুকিয়ে আমার মালাটা শক্ত করে ধরি।
কোনোদিন এই মালা আমি হারাতে দিব না। কোনোদিন না।

সমাপ্ত

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ছোটগল্প বিয়েপাগলি

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

লেখক: শরীফা সুলতানা

নিতুর গায়েহলুদে কোন শাড়িটা পড়ব বাছাই করছিলাম। তখনি নিতুর ফোন।
হ্যালো, জয়া। কাঁদো কাঁদো কন্ঠ নিতুর। আমি ভড়কে গেলাম। আজ বাদে যার গায়েহলুদ সে থাকবে প্রফুল্ল। হাসিখুশি।
মা- খালাদের কাছে শুনেছি বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়েদের উৎফুল্ল থাকতে হয়। হাতে সারাক্ষণ শোভা পাবে খাবারের বাটি নয়ত রুপচর্চা জাতীয় কিছু। বাবার বাড়ি ছেড়ে যাবার দুঃখটা ওর মনে জাকিয়ে বসেছে!
কথা বলছিস না যে?
নিতুর প্রশ্নে বললাম, “বল”
আবারও রিপিট হয়েছে। নিতুর ফুটপাথে বুঝে গেলাম সব।
“কাঁদিস না, আমি আসছি।”
“না কেঁদে আর কি করব বল?” বার বার যার বিয়ে ভাঙে–
ওর ফুঁপিয়ে কান্না আমাকে অস্থির করে তোলে।
আমার চুপ থাকা দেখে ও আবার শুরু করে,
” যার বিয়ে ভাঙে সে বুঝে এর জ্বালা। তোর তো আর বিয়ে ভাঙেনি”
” তা ভাঙেনি, মনতো ভেঙেছে”
কথার পিঠে কথা লাগালাম।
“বিয়ে ভাঙা আর মন ভাঙা এক জিনিস না” ও ফুঁপিয়েই যাচ্ছে।
দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখে মনে মনে বললাম,” একটা মানুষ দেখে, অন্যটা দেখেনা”।
নিতুকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দিলাম।

নিতুর জন্য সত্যিই খারাপ লাগছে আমার। এ নিয়ে পাঁচবার বিয়ে ভেঙেছে ওর। ওকেও বলিহারি। ন্যাড়া কবার বেলতলায় যায়! অবশ্য ওর দোষ দিয়ে লাভ নাই। সবারই নিজস্ব একটা ভুবন থাকে। সেই ভুবন সে তার ইচ্ছেমাফিক সাজায়। নিতুর সংসার করার খুব শখ। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও ও বলত,” আমি চুটিয়ে সংসার করব। ছেলেপুলে মানুষ করব।”
বন্ধুরা মুখ টিপে হাসতাম। আড়ালে ওর নাম দিয়েছিলাম বিয়েপাগলী।

হাত ইশারায় রিক্সা ডাকলাম।
” কই যাইবেন” ?
“কাচিঝুলি মোড়”
নিতুর বাসাটা মোড় থেকে একটু ভিতরে। একটু আগে নেমে ওর জন্য কিছু একটা কিনতে হবে। উপহার ফেলে মানুষের মন ভালো হয়।

“আরে জয়া তুমি?”
পিছন না ফিরেও বুঝে নিতে কষ্ট হয় না এটা আরিফ ভাইয়ের কন্ঠ। নিতুর কাজিন। যাকে দেখলে আমার ভিতরটা ওলট পালট হয়ে যায়। কিন্ত আরিফ ভাই এর ভিতরটা জানি না। উনাকে দেখে কিছু বুঝার উপায় নেই।
সবসময়ই শান্ত দীঘি। এখনও শান্ত। অথচ তার কাজিনের বিয়ে ভেঙে গেছে। আশ্চর্য!
‘কি ভাবছ?”
চোখের সামনে দুই আঙুলের তুড়ি মারতে মারতে বলে
“কিছুনা। নিতুর কাছে আসলাম”
নিজেকে আলগোছে সামলে নেই।
“সেতো আসবেই। প্রিয় বন্ধু বলে কথা”
আরিফ ভাই হাসি প্রসারিত করে বলে।
“আপনার মন খারাপ হচ্ছে না?”
মাথা নিচু করে বলি
তখন হৃদয় তোলপাড় করা হাসি দিয়ে আরিফ ভাই বলে,” না, চলো তোমাকে মিষ্টি খাওয়াই”।
“কি?”
আমি অবাক না হয়ে পারি না।
“তোমার সাথে একটু কথা আছে। অনেকদিন ধরে বলার চেষ্টা করছি কিন্ত পারছিনা”
একরাশ লজ্জার বাতাস আমার চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেয়। কি বলবে? যা শোনার জন্য আমি অষ্টপ্রহর অপেক্ষায় থেকেছি।

মানুষ সত্যিই স্বার্থপর। আমিও তার প্রমাণ দিলাম। নিতুর কথা ভুলে আরিফ ভাইকে অনুসরণ করলাম।
“বলুন” কানের কাছে চুল গুজে দিতে দিতে বললাম।
“তোমার মাথা খারাপ। রাস্তাঘাটে”
তখনি নিতুর ফোন। কিন্ত রিসিভ করতে মন চাইছে না।
“রিসিভ করে বলো এক ঘন্টা পর আসছ”
আরিফ ভাইয়ের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পালন করি।

হাঁটতে হাঁটতে ব্রহ্মপুত্র ভ্যালির সামনে আমরা। চলতে গিয়ে কতবার যে আরিফ ভাইয়ের গা ঘেঁষাতে অস্থির হয়েছি!
“কফি খাবে”
মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই। ও প্রিয়তম আমার তোমার জন্য বিষও খেতে পারি। আর এতো কফি। কবিতার লাইন মনে পড়লেও কার লেখা মনে পড়ছেনা। অবশ্য আরিফ ভাইয়ের কারণে আমার সব গোবলেট হয়ে যায়।
আরিফ ভাই কফির জন্য ওয়েটারকে তাড়া দিতে ব্যস্ত। আর আমি ভিতরে তোলপাড় নিয়ে ঘামছি। কখন শুনব সেই প্রিয় উক্তি-
“এই ছেলে, এদিকে”
আরিফ ভাইয়ের ডাকে দশ বারো বছর বয়সী ছেলেটা বকুল ফুলের মালা নিয়ে এগিয়ে আসছে।
বকুল ফুল আমার খুব প্রিয়। নিশ্চয়ই নিতু বলেছে। এতো পাকামি ওকে কে করতে বলেছে!
লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসছে আমার। ছেলেরা শুধু শুধুই মেয়েদের লজ্জিত দেখতে পছন্দ করে।

“হাত পাতো ”
ভিতরে চরম থরথর কাঁপুনি নিয়ে হাত পাতলাম।
মালা দুটি হাতে দিয়ে আরিফ ভাই বললেন,
“একটা উপকার করবে? তুমি ছাড়া কেউ পারবে না”
যতোটুকু উৎলানো ছিলাম ততোটুকু মিইয়ে গেলাম। কোনোরকম ঢোক গিলে বললাম
“কি উপকার?”
আমাকে অবাক করে দিয়ে আরিফ ভাই বললেন,
“আসলে নিতুর বিয়ে আমিই ভেঙে দিই”
গলা দিয়ে স্বর বের হলোনা আমার। আস্তে করে নতমুখে জানতে চাইলাম
“কেন?”
“একটি ছেলে একটি মেয়ের বিয়ে কেন ভেঙে দেয় বূঝনা।
বয়সতো কম না”
সেই পাগল করা হাসি দিয়ে, আমারে পাগল করতে করতে আরিফ ভাই বলেই যাচ্ছে–
“নিতুকে আমি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি। অনেকবার বলতে চেয়েও পারিনি। এবার যদি দ্বায়িত্বটা তুমি নাও”
মনে মনে বললাম,” অবশ্যই নিব। এই প্রথম তুমি আমার কাছে কিছু চাইলে”
নিজেকে ধাতস্থ করতে পারলেও চোখ বেঈমানি করল।
“তুমি কাঁদছ কেন”
আরিফ ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে বললাম,
” খুশিতে আরিফ ভাই। বিয়েপাগলি বন্ধুটি এবার ঘর পাবে।সেই খুশিতে কাঁদছি।”
“ও তাই বলো”

“”একটা মালা তোমার, একটা নিতুর “।
“আচ্ছা। ”
নিতুর মালাটা পার্সে ঢুকিয়ে আমার মালাটা শক্ত করে ধরি।
কোনোদিন এই মালা আমি হারাতে দিব না। কোনোদিন না।

সমাপ্ত